আত্মগোপনে আওয়ামীপন্থি চেয়ারম্যানরা, সেবাবঞ্চিত জনগণ


নিউজ ডেস্কঃ চলমান পরিস্থিতিতে সরকার পতনের পর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে আ.লীগপন্থি চেয়ারম্যানরা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। ভাঙচুর, হুমকি ও নিরাপত্তার কারণে কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে সেবাদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

রোববার (১১ আগস্ট) সরেজমিন কুলাউড়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ, শুধু সচিব অফিস করছেন।

আওয়ামীপন্থি চেয়ারম্যানদের অনেকেই ক্ষমতার পালাবদলের কারণে নিজেদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রোষাণল থেকে বাঁচতে ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন না। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সনদের আবেদন করেও চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর না থাকায় প্রয়োজনীয় সনদ পাচ্ছেন না। এতে করে জরুরি প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল কাজ করতে পারছেন না ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতারা।

হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স কার্যালয়ে নেই। তার কক্ষ তালাবদ্ধ। শুধু সচিব অফিস করছেন। চেয়ারম্যান না থাকায় তার কার্যালয়ের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে সেবাগ্রহীতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ সময় নাগরিক সনদ নিতে আসেন ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুল মিয়া, মো. এরশাদ আলী, সুরমান আহমদ, মোশাহিদ আলী, রুহুদজামান জিসান, ইয়াছমিন আক্তার সুমাইয়া। উত্তরাধিকারী সনদ নিতে আসেন জাবেদ মিয়া ও জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে আসেন সাহেনা আক্তার।

তারা সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিজেদের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামী লীগের লেবাসধারী চেয়ারম্যানরা অফিসে না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়, বাড়ি কিংবা মোবাইল ফোনে খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না। দায়িত্ব পালনে ভয় পেলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিন নতুবা প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দিন।

এদিকে কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী সোহাগ, কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান, টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক, জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব, কাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান, কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিমিউর রহমান চৌধুরী, শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান অফিস না করে এলাকার বাইরে রয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপিপন্থি ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনিরসহ কয়েকজন চেয়ারম্যান অফিস করেছেন বলে দাবি করেছেন। এদিকে পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদও পৌর কার্যালয়ে অফিস করতে দেখা যায়নি। কুলাউড়ায় ১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার মধ্যে একমাত্র ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপিপন্থি ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র। বাকি সবাই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

হাজীপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমাদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স নানা অপকর্ম করেছেন। এজন্য তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, জনগণের সেবা নিশ্চিতে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে পুলিশ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে সেখানে চেয়ারম্যানরা কীভাবে অফিস করবে। প্রতিপক্ষের উসকানিতে পরিষদে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য নিরাপত্তাহীনতায় অফিসে যাচ্ছি না।

ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আজিজুর রহমান মনির বলেন, চেয়ারম্যানদের নিরাপত্তার বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করেছি। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বলেছি, জনগণের প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে চেয়ারম্যানদের সার্বিক সহযোগিতা করা দরকার।

টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক বলেন, নিরাপত্তার অবনতির কারণে ইউপি অফিসে যাইনি। দুষ্কৃতকারীরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এসে ভাঙচুর করে সচিবকে হুমকি প্রদান করে।

কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে অফিসে যাইনি।

শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে অসুস্থ থাকায় একদিনও অফিসে যাইনি। তবে বাড়িতে থেকে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে অনেক চেয়ারম্যানরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে কয়েকজন চেয়ারম্যান রোববার অফিস করেননি বলে আমাকে জানিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। জনগণের প্রয়োজনেই প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাজে গতি আনতে সবাইকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post