নিউজ ডেস্কঃ ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। এবারের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৪৭ হাজারের বেশি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সারাদেশে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ৩ হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি, দাখিল, এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী, ১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) এসএসসি পরীক্ষা বাংলা ১ম পত্র দিয়ে শুরু হবে। এ পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১২ মার্চ। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৩ মার্চ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। নয়টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ড এসএসসি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড দাখিল ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে আছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। গত বছর পরীক্ষা দিয়েছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩জন। সে হিসেবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৪৭ হাজার ৯৭১জন। তবে পরীক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষা কেন্দ্র কমেছে ১৮০টি এবং পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যা কমেছে ৬৩টি।
কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী
গত কয়েক বছরে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিন শিক্ষামন্ত্রীর কেন্দ্র পরিদর্শনের বিষয়টি অনেকটা রীতি হয়ে গিয়েছিল। কখনো সচিব এবং বোর্ড সচিবসহ বহর নিয়ে যেতেন শিক্ষামন্ত্রী। সমালোচনার মুখে একপর্যায়ে কেবল শিক্ষামন্ত্রীকে কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতে দেখা গেছে। তবে, এ বছর থেকে আর কেন্দ্র পরিদর্শনেই যাবেন না নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুর হাসান চৌধুরী নওফেল।
৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা আইন অনুযায়ী— কোনো মন্ত্রী, সচিব বা অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেন না। এজন্য মন্ত্রী হিসেবে আমিও যাবে না। পরীক্ষা কক্ষে শুধু পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা থাকবেন।
নকলমুক্ত করতে যত উদ্যোগ
প্রশ্নফাঁসের গুজব ও নকলমুক্ত পরিবেশে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজনে গত মঙ্গলবার থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত এক মাস সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে জেলা পর্যায়ের ট্রেজারি ও উপজেলা বা থানা পর্যায়ে থানা হেফাজতে সংরক্ষণ করা হবে। থানা বা ট্রেজারি থেকে পুলিশ পাহারায় প্রশ্ন কেন্দ্রে-কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস বা এ সংক্রান্ত গুজব ঠেকাতে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে নজরদারি। এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নজরদারি চালাবে। প্রশ্নফাঁস বা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা থাকবে, সেদিন ওই বিষয়ের সব সেট প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তারপর পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্র সচিবকে জানানো হবে, কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার হলে কেন্দ্র সচিব কেবল সাধারণ মানের মোবাইল ফোন (বেসিক ফোন) ব্যবহার করতে পারবেন। এর বাইরে কেউ (সচিব ছাড়া) তা করতে পারবেন না। এটি কোনো কেন্দ্রে করা হলে কেন্দ্র বাতিল এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক হলে তাদের এমপিও বাতিল করা হবে।
অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থী পরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে এবং ওইদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।
পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষা বোর্ডসমূহের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো অনলাইনে সার্বক্ষণিকভাবে তথ্যাদি আদান-প্রদান করবে।
বিদেশে ৮ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবে ৩৫২ জন
দেশের বাইরের ৮ কেন্দ্রে মোট ৩৫২ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বিদেশের ৮টি কেন্দ্র হলো- সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রিয়াদের বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি স্কুল, ত্রিপোলির বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল, কাতারের দোহায় বাংলাদেশ মাসহুর-উল-হক মেমোরিয়াল হাইস্কুল, দুবাইয়ের শেখ খালিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, মানামার বাহরাইনে বাংলাদেশ স্কুল ও ওমানের বাংলাদেশ স্কুল।
থাকবে কুইক রেসপন্স টিম
এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের যে কোনো অসুবিধা মোকাবিলা করতে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান।
মুনিবুর রহমান বলেন, আসন্ন এসএসসি-দাখিল-ভোকেশনাল পরীক্ষা উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বছর শেষে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে উল্লেখযোগ্য ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে থাকে। এসএসসি পরীক্ষা একটা উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট। এই পরীক্ষার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত থাকেন তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করে থাকি। এই উপলক্ষ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।