মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে ব্যতিক্রমী বিয়ে


ইমাদ উদ দীন: মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে আয়োজন হলো ব্যতিক্রমী বিয়ে। এমন বিয়ের খবর চাইর হলে বর কনে নিয়ে কৌতুল জাগে সবার। সবার মুখে নানা আলোচনা সমালোচনা।

জানা যায় আদালতের নির্দেশেই এমন আয়োজন। বর হাজতে আর কনে পিত্রালয়ে। কারাগারেই ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক কাজী বর কনে উভয়কে বিয়ে পড়ান। সকল আনুষ্ঠানিকতা ও দোয়া শেষে উভয় পরিবার ও উপস্থিত সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয় মিষ্টি।

মঙ্গলবার ৩১ অক্টোবর দুপুরে আদালতের নির্দেশেই জেলা কারা কর্তৃপক্ষ এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে। বিয়ের বর কমলগঞ্জ উপজেলার সতীঝীরগাওয়ের বাসিন্দা। ২০২২ সালের মে মাস থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন বিচারাধীন মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। আর কনে একই মামলার বাদী ভুক্তভোগী কুলাউড়া উপজেলার উচলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। আদালতের নির্দেশে নারী ও শিশু  নির্যাতন মামলার হাজতীর সাথে এই মামলার ভুক্তভোগী নারীর বিয়ে সম্পন্ন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নিকট অতীতে কারাগারে এমন বিয়ের রের্কড নেই বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

বিয়েতে জেল সুপার, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিসহ বর ও কনে উভয় পক্ষের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ঠ  কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ভিকটিম ও উভয় পরিবারের সম্মতিতে ইসলামী শরীয়া মতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। আদালতের এমন রায়কে অভিভাবদন জানিয়েছেন উভয় পরিবারের সদস্য ও জেলার সচেতন মহল।

জানা যায় ওই মামলায় বিবাদী (বর) বাদীকে অপহরন করে ধর্ষণ করে। এরপর কনে পক্ষের লোকজন মামলা করেন। এখন ছেলে ও মেয়ে উভয়ের সম্মতিতে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর কনে নতুন জীবনের জন্য সকলের দোয়া চান।

জেলা প্রশাসকের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছা: মলি আক্তার। গণমাধ্যমকর্মীদের সহকারী কমিশনার বলেন জেল সুপারসহ অন্যান্য প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সকলেই প্রত্যাশা করছি তারা ভবিষ্যতে সুখী হবেন ও ভালো থাকবেন। যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালত থেকে পাওয়া যাবে।

জেল সুপার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে কমলগঞ্জ উপজেলার এক হাজতী ও  তার সঙ্গে ভিকটিম কুলাউড়ার বাসিন্দা নারী বর ও কনের আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে জেলা কারাগারে। এসময় হাজতীর মা ও দুই চাচা এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। বিয়ের পর বর পূর্বের ন্যায় কারাগারে থাকেন ও  কনেকে পরিবারের সদস্যরা নিয়ে যান।

তিনি আরও জানান ওয়ানরেন্ট সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি এটা নারী ও শিশু ও নির্যাতন মামলা। আসামী (বর) ২০২২ সালের ২২ মে থেকে কারাগারে আছেন। অবশেষে আদালত যে রায় দিয়েছেন আমরা এ রায়কে অভিনন্দন জানাই। এতে করে দুইটি মানুষের জীবন ও পরিবার রক্ষা হয়েছে। নয়তো আসামীর জীবন জেলেই কেটে যেতো। মেয়েটির জীবনেও নানা ধরনের সমস্যা হত। এখন মেয়েও ছেলেকে গ্রহণ করেছে। ছেলেও মেয়েকে গ্রহণ করেছে। এটা সকলের জন্য আনন্দদায়ক। উভয় পরিবারের অভিভাবকরা নবদম্পত্তির জন্য দোয়া চেয়ে বলেন এখন তাড়াতাড়ি যেন মামলাটির নিষ্পত্তি হয় এবং তারা ঘর সংসার শুরু করতে পারে সেজন্য আমরা মহামান্য আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবো।

Post a Comment

Previous Post Next Post