চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র নাঈম হত্যাকাণ্ড, কলেজ শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ


মু. ইমাদ উদ দীন: জন্মদিনেই ঘাতকেরা প্রাণ কেড়ে নিলো কলেজ শিক্ষার্থী নাঈমের। ঘরের বড় ছেলেকে হারিয়ে চলছে শোকের মাতম। মা,বাবা,বোন ও পরিবারের সদস্যদের চোখের সামনেই দরজা ভেঙ্গে ঘরের ঢুকে সন্ত্রাসীরা নির্মম ভাবে পিঠিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে রেজাউল করিম নাঈম (২১) কে। চোখের সামনে ভেসে উঠা এমন দৃশ্যে এখন কান্নায় বার বার মূর্চা যাচ্ছেন তারা। কোনো ভাবেই শান্তনা দেওয়া যাচ্ছেনা তাদের। এমন নির্মম হত্যাকান্ডে স্তম্ভিত মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শহরতলী টিবি হাসপাতাল সড়কের বর্ষিজোড়া এলাকাবাসীসহ পুরো জেলার মানুষ। কলেজ পড়ুয়া একমাত্র বোনের বিয়ে ও নিজের ইতালিতে যাওয়ার সবকিছু ঠিকটাক থাকলেও ঘাতকদের হাতে জন্মদিনেই অকালে প্রাণ হারালো নাঈম। এমন চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে দ্রুত এসকল চিহ্নিত উঠতি সন্ত্রাসী ও খুনীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির জোর দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ পুরো জেলার মানুষ।

সোমবার ১৩ নভেম্বর দুপুরে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নাঈমের সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে হত্যাকারী খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। ডিগ্রি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম নাঈমের নৃশংস হত্যার সাথে জড়িত খুনীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, মুল ফটকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল পরবর্তী কলেজ শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা বিশ্বজিৎ নন্দীর সভাপতিত্বে ও মো: নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাজিব সূত্রধর, শাহরুখ ইসলাম, রেদোয়ান হোসেন সোহান, ওয়াজেদুর রহমান, নাঈমের ছোট ভাই মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজওয়ান করিম নাদিমসহ শিক্ষার্থীরা।

বক্তারা ক্ষোভের সাথে বলেন ফিল্মি স্টাইলে পরিবারের সদস্যদের সামনে শান্ত,ভদ্র,মেধাবী সম্ভাবনাময়ী আমাদের সহপাঠীকে পিঠিয়ে ও কুপিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করল। আমরা অবিলম্বে নৃশংস হত্যাকারী সকল চিহ্নিত ঘাতকদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। তারা বলেন বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার ঘুরপাকে যেন নাঈমের হত্যাকারীরা রেহাই না পায়। খুনীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবিতে যেনো আমাদেরকে আর আন্দোলনে না নামতে হয়।

জানা যায় ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শহরতলী টিবি হাসপাতাল সড়কের বর্ষিজোড়া এলাকায় ফেসবুকে পোস্ট ও ফেইক আইডি খোলার মিথ্যা অভিযোগে ওই এলাকার চিহ্নিত অপরাধী নুরুল ইসলাম ও তার সহযোগিদের হামলায় রেজাউল করিম নাঈম নামের এক কলেজে ছাত্র খুন হন। ফেসবুক আইডি নিয়ে নাঈমের পিতার ডেকোরের্টাস ব্যবসায়ী মো: চেরাগ মিয়া (৫৩)’র সাথে বিরোধের জেরে নিজ বসতবাড়িতে কথাকাটাকাটি ও মারধরের একপর্যায়ে পিতাকে রক্ষায় ছেলে এগিয়ে আসলে চওড়াও হয় সন্ত্রাসীরা। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তারা পরিবারের সবাইকে হামলা করে। তাদের অতর্কিত হামলায় আত্মরক্ষার্থে নাঈম বসত ঘরের একটি কক্ষে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের সামনেই নাঈমকে নির্মমভাবে পিঠিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪ টার দিকে মৃত্যু হয় নাঈমের।

ঘটনার একদিন পর হত্যাকান্ডের মূল হোতা বর্ষিজোড়া এলাকার ইদ্রিস মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম-কে প্রধান আসামী করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহত নাঈমের বাবা মো. চেরাগ মিয়া (মামলা নং ৮/৩৪০)। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামী করেন। ঘটনার পরদিন সকালে সায়মন ইসলাম নামে একজনকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হলেও প্রধান আসামীসহ অন্যরা রয়েছেন পলাতক। এদিকে ঘটনার প্রায় ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ সর্বমহল। মামলার অন্য আসামীরা হলেন নুরুল ইসলাম এর ছেলে মোঃ রনি মিয়া (২৩), কাদির মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৪), ইদন মিয়ার ছেলে সোহান মিয়া (১৯),আব্দুল আজিজ এর ছেলে মোঃ সাইমন ইসলাম (২১), ইদন মিয়ার ছেলে মোঃ ইমন মিয়া (২১), আলামিন মিয়া (২০) পিতা অজ্ঞাত,সাকিল হোসেন (২১) পিতা অজ্ঞাত, নুরুল ইসলাম এর স্ত্রী পারভিন বেগম (৪৫) ও নুরুল ইসলাম এর মেয়ে জেসি আক্তার (২০)সহ অজ্ঞাত আর ৪-৫ জন।

নাঈমের বাবা চেরাগ মিয়া বলেন তারা পূর্বপরিকল্পনানুযায়ী আমার ছেলেকে সবার সামনে পিঠিয়ে ও কুপিয়ে মেরে ফেললো। তিনি বলেন নুরুলের মেয়ে জেসি বিদেশে যাবে বলে আমার কাছে বড় অংকের টাকা চেয়েছিলো। আমি তা দিতে না পারায় তারা এমন ঘটনা সাজালো। আমি প্রশাসনসহ দেশবাসীর কাছে ছেলে হত্যার বিচার চাই।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান আসামীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post