স্টাফ রিপোর্টারঃ বহুল কাঙ্খিত স্বীকৃতিটুকু পেল কুলাউড়া উপজেলার ‘পাইকপাড়া এম এ আহাদ আধুনিক কলেজ’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (বেসরকারি কলেজ – ৬ শাখা) থেকে কলেজ স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোসাঃ রোকেয়া পারভীন সাক্ষরিত অনুমতির চিঠি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় ২২ আগস্ট। এমন সংবাদে আনন্দে মাতোয়ারা কলেজ সাংগঠনিক কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। এই মাহেন্দ্রক্ষণে সোমবার কলেজে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। কৃতজ্ঞতা জানানো হয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কুলাউড়ার কৃতী সন্তান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ এ প্রাপ্তিতে সর্বাত্নক সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের প্রতি।
জানা যায়, কুলাউড়ার দক্ষিণাঞ্চলের তিন ইউনিয়ন হাজীপুর, শরীফপুর ও টিলাগাঁওয়ে কোন কলেজ ছিল না। ২০২০ সালের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘হাজীপুরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি’ এমন পোস্ট করেন স্থানীয় পাইকপাড়ার বাসিন্দা, সাংবাদিক ছয়ফুল আলম সাইফুল। এতে সাড়া দেন একই এলাকার বাসিন্দা, শিক্ষাক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতাকারী পরিবারের সদস্য, নিউইয়র্ক প্রবাসী মোঃ আব্দুল আহাদ। তিনি বাড়ির পাশে ১০৭ শতক জায়গা নির্ধারণ করে কলেজ করতে উদ্যোগী হন। এই মহতি কর্মযজ্ঞে শামিল হন উনারই সহধর্মিণী নিউইয়র্ক প্রবাসী শিক্ষিকা সালমা সুলতানা, চাচাতো ভাই শামসুল হক, ফজলুল হক, ছয়ফুল আলম সাইফুল, মাজহারুল আলম মাসুম, ইন্জিনিয়ার মোঃ মিজানুর রহমান ও সাইফ উদ্দিন জুনেদ । পরবর্তীতে আরো কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর মোঃ আব্দুল আহাদের নামের আগে এলাকার নাম যুক্ত করে কলেজের নামকরণ করা হয় ‘পাইকপাড়া এম এ আহাদ আধুনিক কলেজ’। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থাপনের অনুমতির মধ্যে দিয়ে সেই স্বপ্নবাজদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতিটুকু মিললো। এ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কুলাউড়ার কৃতী সন্তান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, একটি অঞ্চলের এগিয়ে যাওয়ার নিয়ামক হলো শিক্ষা। যার কোন বিকল্প নেই। কিন্তুু কলেজ না থাকায় এই এলাকার অনেক কোমলমতির মাধ্যমিকেই পড়ালেখা থেমে যেত। আশাবাদী নবপ্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্টানের আলোয় পিছিয়ে পড়া জনপদ হাজীপুর-শরীফপুর আলোকিত হবে। কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য এটি বড় সুসংবাদ। তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষা দিয়ে গড়ার সুযোগ হলো। দৃঢ় বিশ্বাস করি কলেজটি একসময় এই অঞ্চলের বাতিঘরে পরিণত হবে। প্রতিষ্ঠানটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। হাজীপুর সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর (অবঃ) নুরুল মান্নান চৌধুরী বলেন, উন্নত দেশে মানুষে মানুষে পার্থক্যটুকু খুবই কম। আমাদের দেশে তা বেশি। কারণ হলো সুশিক্ষার অভাব। প্রান্তিক এই জনপদে প্রতিষ্ঠানটি সুশিক্ষা দিয়ে দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী। বিশেষ করে এই বৃহৎ এলাকার নারীরা অনেক দূরে গিয়ে পড়তে হতো। অনেকই ঝরে পড়ত। এখন বাড়ির পাশেই প্রতিষ্ঠান। পশ্চাৎপদ এই জনগোষ্ঠীর জন্য কলেজটি আশার বাণী। স্কোয়াড্রন লিডার সাদরুল আহমদ খান পলিট বলেন, আমার বিশ্বাস কলেজটি অচিরেই সকল শর্ত পূরণ করে পূর্ণাঙ্গ কলেবরে হাজীপুর – শরীফপুরসহ আশপাশের অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখবে। এখান থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামীর নেতৃত্ব ও সুনাগরিক।
সমাজসেবী ফাহিমা খানম চৌধুরী মনি বলেন, উন্নত জাতি গঠনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একজন শিক্ষিত মায়ের গুরুত্ব অনেক। আমার জন্মমাটি হাজীপুর ইউনিয়ন ও পাশ্ববর্তী শরীফপুর ইউনিয়নে কলেজ নির্মাণ বড্ড প্রয়োজন ছিল। এই প্রতিষ্ঠান হওয়ার মধ্য দিয়ে এতদাঞ্চলের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ আব্দুল আহাদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার সাথে সম্পৃক্ততার ইতিহাস আমাদের পরিবার -পরিজনের সুদীর্ঘ। আর যারা সাহস জুগিয়েছেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আর কয়েকটা বছর কষ্ট করলেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব, ইনশাআল্লাহ। কলেজ সাংগঠনিক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ভাল কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারায় আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া জানাই। এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের ভূমিদাতা আমাদের পরিবারেরই লোকজন। আশা করি কুলাউড়ার দক্ষিণাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে কলেজটি অগ্রনী ভূমিকা রাখবে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা জান্নাত প্রতিক্রিয়ায় বলে কলেজটি না হলে মাধ্যমিকেই থেমে যেত পড়ালেখার অধ্যায়। আমরা অনেক খুশি বাড়ির পাশে কলেজ পেয়ে।