স্টাফ রিপোর্টারঃ হাজারও ছাত্র-শিক্ষকের প্রিয় উস্তাদ, বৃহত্তর সিলেট বিভাগ তথা মৌলভীবাজার জেলার বর্তমান সময়ের শীর্ষ মুরব্বি, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থের শিক্ষক, জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আধ্যাতিক আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল বারী (৮৭) ধর্মপুরী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় মৌলভীবাজার শহরের সুলতানপুস্থ ভাড়া বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর বুধবার সন্ধ্যায় প্রথমে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে মুহুর্তে তা ছড়িয়ে পরে দেশ-বিদেশে। খবর পেয়ে জেলার কওমী অঙ্গণের বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ছাত্র-শিক্ষক, স্বজন, রাজনৈতিক অঙ্গণের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের স্রোত নামে কাজিরগাও এলাকার ওই বাসাটিতে। সেখানে শোকার্ত মানুষের পাশাপাশি শোক জানাতে উপস্থিত হন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমানসহ বিশিষ্টজনেরা। মৃত্যুকালে তাঁর ৮ মেয়ে ও ৩ ছেলেসহ অসংখ্য স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে।
বৃহস্পতিবার ৭ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে শহরের শাহমোস্তফা (রহ) টাউন ঈদগাহ মাঠে পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় ক্ষণজন্মা বরেণ্য আধ্যাতিক এ আলেমের জানাযার নামাজ। সেখানে বৃহত্তর সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবীদ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল,শিক্ষকসহ নানা শ্রেনী পেশার হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। জানাযার নামাযের পূর্বে ঈদগাহ প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছে আল্লামা আবদুল বারী ধর্মূপুরীর মরদেহবাহী এম্বুল্যান্স। সেখানে এম্বুল্যান্সে রাখা মরদেহ বাহির থেকে গ্লাসের ফাঁক দিয়ে শেষ দেখা দেখেন জানাযায় অংশ নেয়া মানুষজন।
জানাযার নামাজের আগ মুহুর্তে মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আয়াছ আহমদ ও মাওলানা আহমদ বিলাল এর যৌথ পরিচালনায় বরেণ্য এই শীর্ষ আলেমের কর্মময় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, বরুণার পীর আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, মুফতি হাবিবুর রহমান, সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, গহরপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রফিকুল ইসলামসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা। বক্তব্য শেষে মরহুম আব্দুল বারীর বড় ছেলে মুফতি হিফজুর রহমান ফুয়াদ তাঁর বাবার জানাযার নামাজ পড়ান।
মরহুমের জানাযার নামাযের ইমামতি করেন তাঁর সুযোগ্য বড় ছেলে, বরুনা মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি হিফজুর রহমান ফুয়াদ।
জানাজা শেষে ধর্মপুরীকে ধরকাপন জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফন শেষে দোয়া পরিচালনা করেন দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম শায়খুল হাদিস মুফতি শামছুজ্জোহা। এসময় শত শত মুসল্লিরা দাফন ও দোয়ায় অংশগ্রহণ করেন।
বুধবার ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় মৌলভীবাজার শহরের সুলতানপুর বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি ৩ ছেলে, ৮ মেয়ে, নাতী, নাতনীসহ অসংখ্য ছাত্র ও গুনগ্রাহী রেখে মারা যান।
মরহুম ধর্মপুরীর ছোট ছেলে সাইফুর রহমান ফয়সল জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্ষ্য জনিত রোগে ভুগছিলেন। কিছুদিন সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। সেখান থেকে নিয়ে আসার পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজ বাসায় ছিলেন।