স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা বাঁশের সাঁকোই ভরসা



স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নদীর ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য পাঁকা সেতু না থাকায় প্রায় ৫ দশক ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা বাঁশের সাঁকো-ই ভরসা তিনটি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের। প্রতি বছর এই জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করে চলাচল করতে হয়। নিত্যদিনের দুর্ভোগ আর ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গুগালীছড়া নদীর ওপর থাকা জরাজীর্ণ সাকোঁ দিয়ে চলাচল করতে হয় আবুতালিবপুর, বেগমানপুর ও মিঠুপুর গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষকে। এখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের পাঁকা সেতুর দাবি শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।

সম্প্রতি সাকোঁটি চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়লে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রুপ’ এর সদস্যরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমে সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরে সেটি মেরামত করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বিমল দাস, স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আহাদ, আতাউর রহমান দুদু, নওশাদ মিয়া, আব্দুন নুর, মাহবুবুর রহমান মাছুমসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান, এলাকার মানুষ গুগালী ছড়া নদীর ওপর একটি পাঁকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন স্বাধীনতার পর থেকে। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এমপির কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু ৫০ বছর ধরে এলকাবাসীর সে দাবি শুধু আশ্বাসেই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় তারা দুর্ভোগ নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই নদী পারা পার হতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্স অথবা গাড়ি গ্রামে ঢুকতে পারেনা সেতু না থাকায়।

তাঁরা আরো জানান, প্রতি বছর বর্ষায় নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল নেমে বাঁশের সাঁকোটি একেবারে চলাচল অনুপোযোগি হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা প্রতি বছর চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে সেটি মেরামত করেন। এভাবেই দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত জুলাই মাসে সাঁকোটি ভেঙে গেলে স্থানীয়রা সেটি স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেন। গত সপ্তাহে আবারো সেটি নদীর পানির ¯্রােতে ভেঙে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা সোমবার সাঁকোটি আবার মেরামত করেন। তবে কতদিন সাঁকোটি ভালো থাকবে সেই ভয়ে রয়েছন এলকাবাসী। জনদুর্ভোগের চিন্তা করে দ্রুত এখানে একটি পাঁকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. সামসু উদ্দিন বাবু জানান, আবুতালিবপুর, বেগমানপুর ও মিঠুপুর গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে গেছে। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা সেটি মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করি। স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী বাঁশের যোগান দেন। আমরা তার, রশিসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিস সংগ্রহ করি। সোমবার এলাকাবাসী কয়েকজনের সহযোগিতায় সংগঠনের ২০ জন সদস্য প্রায় তিনঘণ্টাব্যাপী সাঁকোটি মেরামত করে চলাচল উপযোগি করেছি।

জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু জানান, ‘গুগালিছড়া নদীতে একটি পাঁকা সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার জানিয়ে কোন কাজ হচ্ছেনা। এলাকার প্রায় দুই হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। গত মাসে সাঁকোটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে সেটি সংস্কার করেছেন। আবারো সেটি ভেঙে গেলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কুলাউড়ার মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা সেটি সংস্কার করেছেন। এখানে একটি পাঁকা সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরী।’

কুলাউড়া উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী খোয়াজুর রহমান বলেন, বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই এলাকায় নদীর ওপর পাঁকা সেতু নির্মাণের বিষয়ে শীগগীরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post