কমলগঞ্জের মনিপুরী পাড়ায় পাড়ায় মহারাসলীলা উৎসবের প্রস্তুতি


নিউজ ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মনিপুরী অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের রং ফুটছে। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে রং করানোর কাজ। এলাকার হাওয়ায় এখন নীরব সুর বাজছে। রাস আসছে। রাস আসছে। এবারের রাস উৎসব হবে ৩০ নভেম্বর।

এই দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের ম‚ল প্রাণ মহারাসলীলা। তাই মনিপুরী পল্লীর বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েরা নাচছে। নাচের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোনো জায়গায় চলছে রাসনৃত্যের মহড়া। কোনো জায়গায় রাখালনৃত্যের। এগুলো এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নৃত্যকে নিখুঁত করার ঘষামাজার শেষ পর্যায়ে।

মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব“রাসমেলা। রাসোৎসবে মনিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকজন মেতে উঠবে একদিনের আনন্দ উৎসবে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণয় মুখরিত হয়ে উঠবে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপ প্রাঙ্গণ।

রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। সেখানে মনিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মনমুগ্ধ করে রাখবে লাখো ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। মনিপুরী পল্লীর এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মনিপুরী স¤প্রদায়ের লোকজনসহ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসেন মহারাসলীলা অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য।

এবার মাধবপুর জোড় মণ্ডপে ১৭৮তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মনিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের ম‚ল প্রাণ মহারাসলীলা।

অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। এবার হবে ৩৮তম রাস উৎসব। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মনিপুরী মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্ত:স্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় মাস খানেক ধরে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলছে। ৩ টিতে রাসনৃত্য ও ৩ টিতে রাখাল নৃত্য। মাধবপুরে ৩ টি জোড় মণ্ডপের আওতায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একেকটি মণ্ডপে আছেন একজন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। গোপীবেশী শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর। শুধুমাত্র রাধার বয়স ৫ থেকে ৬ বছর। নৃত্যের প্রতিটি দলে নূ্ন্যতম ১২ জন অংশ নিয়ে থাকে। একইভাবে রাখাল নৃত্যেরও প্রতিটি দলে ২০ থেকে ২২ জন ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী বালক অংশ নিয়ে থাকে।

কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুরে রাসমেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহারাসলীলাল ম‚ল উপস্থাপনা শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে। রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলার কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।

কিভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে সরাসরি কমলগঞ্জ যাওয়া যায় ট্রেনে। সিলেটগামী পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের ভানুগাছ রেল স্টেশনে থামে। এছাড়া অন্যান্য ট্রেনে কমলগঞ্জের শমসেরনগর রেল স্টেশনে এসেও সেখান থেকে সহজেই মাধবপুর ও আদমপুর আসা যায়।

এছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের শ্রীমঙ্গল আসতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ (ভানুগাছ) আসা যায় বাস কিংবা অটো রিকশায়। সেখান থেকে একইভাবে যাওয়া যাবে মাধবপুর ও আদমপুরে।

কোথায় থাকবেন :
কমলগঞ্জে থাকার তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছি থাকার জন্য ব্যবস্থা হল লাউয়াছড়া বনের পাশে বেসরকারি সংস্থা ‘হীড বাংলাদেশ’র বাংলো, কমলগঞ্জ ডাকবাংলো, এছাড়া কমলগঞ্জের কাছাকাছি থাকার জন্য আরও কয়েকটি ভালো জায়গা আছে। এছাড়া শমশেরনগর বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত সুইস ভ্যালী’ রিসোর্টসহ আছে বেশ কয়েকটি আধুনিক কটেজ। এছাড়াও আপনি স্বল্প খরচে থাকতে পারেন ভানুগাছ বাজার এলাকার স্থানীয় আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলিতে। সুত্রঃ সিলেট টুডে

Post a Comment

Previous Post Next Post