কৌশলগত কারণে জোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছি না: কাদের


অনলাইন ডেস্কঃ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হেরে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি এখন নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে। তারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছে তারা জিততে পারবে না।

ড. কামাল হোসেন সিইসির পরিবর্তন চান। এক মাস পর নির্বাচন। এর মধ্যে সিইসির পরিবর্তন যারা চান, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান- এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, কৌশলগত কারণে এখনই জোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছি না। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের আশা প্রকাশ করে কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরও মডার্ন, আরও শক্তিশালী, আরও সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ের মাসে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাব ইনশাআল্লাহ।

২৩০ আসনে রোববার সকালে দলীয় প্রার্থীদের চিঠি দেয়া শুরু করার পরে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন সোমবার বিকালে জোটগতভাবে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কৌশলগত কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের তালিকা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, কৌশলগত টেকনিক্যাল কারণে আজ আমাদের জোটগত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছি না। আমাদের প্রার্থীদের স্ক্রুটিনি (পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত) যেদিন শেষ হবে তারপরের দিন আমরা সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে জোটের তালিকা প্রকাশ করব।

তিনি বলেন, দলীয়ভাবে যে তালিকা আমরা করেছি সেটা কিন্তু প্রেসে দেইনি। আমরা চিঠি দিয়ে মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দলের ও শরিকদের মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের আগেই গণমাধ্যমে তাদের নাম চলে এসেছে। হয়তো এদের কেউ আসলে মনোনয়নই পাননি। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশের কারণে লজ্জাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শোনা কথা লিখলে প্রার্থীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যেমন প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছি, তেমনি শরিক দলের অন্যরাও এটা করবে। জাতীয় পার্টিও এটা করছে, যুক্তফ্রন্ট ও ১৪ দলও এটা করছে। কিন্তু আমাদের স্ক্রুটিনি (পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত) শেষ হলে আমরা জোটের মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করব। কিছু আসনে দু’জনকে চিঠি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরে আবার মাঠপর্যায়ে জরিপ করব। কে আসলে বেশি গ্রহণযোগ্য সেই রিঅ্যাকশনটাও আমরা বিবেচনায় নেব। আবার কখনও কখনও প্রার্থীদের মধ্যে ডিফল্ডারও থাকে। এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়ার আগে আমরা পুরোপুরি প্রার্থিতা প্রকাশ করতে চাই না। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে শরিকদের সঙ্গে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এটা প্রকাশ করা হবে। যাদের চিঠি দেয়া হয়েছে তাদের আসনে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে যদি অধিকতর কোনোও যোগ্য প্রার্থী থাকে, তাকে বিবেচনায় নিতে সেটা হতেও পারে।

শরিকদের কতটি আসন দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট ও ১৪ দল সব মিলিয়ে ৬৫ থেকে ৭০টির বেশি নয়। তিনি বলেন, একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলাম তিনি উইনেবল নন, তাহলে আমার লাভটা কি? নির্বাচনের জেতার জন্য প্রার্থী দেয়া হয়। আমাকে তো বেশি সংখ্যায় বিজয়ী হতে হবে। তাহলে কেন আমি সেই রিস্কে যাব? সে আমার দলের হোক আর শরিক হোক। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যদের মনোনয়ন দেব। মনোনয়নের নামে বানরের পিঠা ভাগ করতে চাই না।

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী দেখে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতেই কি জোটগত প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এমনটি আমরা ভাবছি না। কিন্তু প্রতিপক্ষের কৌশল তো আমাদের দেখতে হবে। কৌশলে মার খাওয়া যাবে না। কৌশলে এগিয়ে থাকতে হবে। গণতন্ত্র নম্বরের লড়াই। সরকার গঠন করতে হলে গণতন্ত্রে মেজরিটি পেতে হবে। কাজেই সিট কমিয়ে কি টার্গেট নম্বর অর্জন করতে পারব? আমার দলের লোক হোক, শরিক দলের হোক, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় যারা জয়লাভ করবেন তাদের বিবেচনায় নিচ্ছি। জোটের স্বার্থে চিঠি দেয়া আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের চিঠি দেয়া হয়েছে, সেখানে যদি জোটের অধিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকে তাহলে তাদেরও স্যাক্রিফাইস করতে হবে।

দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিদ্রোহী হলেই বহিষ্কার। বিদ্রোহীরা যদি বিজয়ী হন বা বেশি জনপ্রিয় হন তাহলে তাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- না, এবার সারা জীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চমক কি শেষ, নাকি আরও চমক আছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার আগে এটা বলব। বিতর্কিতদের আসনে তাদের পরিবারের লোকদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যাকে প্রার্থী করেছি সে অপরাধী কিনা সেটা বলতে হবে। যাদের বিষয়ে বিতর্ক ছিল তাদের প্রার্থী করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

দলীয় প্রার্থীদের চিঠি দেয়ার পরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক-দুটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আওয়ামী লীগ এত বড় একটা দল। একটা পরিবারেও তো সবাই সমান হয় না। আওয়ামী লীগও তো একটা পরিবার। ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমপি হওয়া একজনের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। কিন্তু এটা ব্যাপক আকারে হবে না।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদের গণফোরামে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে চলে গেছেন। কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে নেই। মাহমুদুর রহমান মান্না সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। সেও চলে গেছে। কাজেই এসব নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। এ ধরনের লোক চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বই কমেনি। আমাদের নেত্রী দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেশরতœ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। আইআরআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী যার জনপ্রিয়তা ৭০ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুর সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এমএম কামাল হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।

Post a Comment

Previous Post Next Post