রোদের তেজ কমিয়ে উষ্ণায়ন রোধ!


অনলাইন ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে বিশ্বকে। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে যে হারে গ্রিন হাউজ গ্যাস নি:সরণ হচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হবে। উষ্ণায়ন রোধে অবশ্য বসে নেই বিজ্ঞানীরা। উষ্ণায়ন রোধে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এসবের বাইরে এবার উষ্ণায়ন রোধে বিজ্ঞানীরা অভিনব এক কৌশলের কথা প্রস্তাব করেছেন। পৃথিবীর উষ্ণায়ন রোধে সূর্যের তাপের তীব্রতা কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা! হার্ভার্ড এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ইনভারনমেন্টাল রিসার্চ লেটার জার্নালে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে শুরু করে ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার উচ্চতায় ট্রপোবিরতি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে বলা হয় ট্রপোমণ্ডল। ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপশক্তির কারণে বায়ুমণ্ডলের এই স্তরটি বেশি উত্তপ্ত হয়। তাই নিচের থেকে যত উপরে যাওয়া যায় এই স্তরের তাপমাত্রা তত কমে আসে। আবহাওয়ার সব ধরনের উপাদানসহ বায়ুমণ্ডলের শতকরা ৮০ ভাগ ভর ধারণ করে ট্রপোমণ্ডল। বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিপুল পরিমাণ সালফেট কণা ছড়িয়ে দিতে চান। ট্রপোমণ্ডলে সালফেট কণা ছড়িয়ে দিতে পারলে সূর্যের রোদ এত তীব্রভাবে পৃথিবীতে আসতে পারবে না, সালফেট কণায় বাধাপ্রাপ্ত হবে। সূর্যের রোদ অনেকটা হালকা হয়ে প্রবেশ করবে। আর এটি করতে পারলে পৃথিবীর উষ্ণায়ন অর্ধেক পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তারা যুক্তি দিয়েছেন।

অবশ্য তাদের এই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত গবেষণা পর্যায়েই রয়ে গেছে। আদৌ সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কীনা কিংবা হলেও কতটা ব্যয়বহুল হবে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। এই ধরনের সালফেট কণা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে ১৫ বছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। এর সঙ্গে প্রতি বছর যোগ হবে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার। প্রকল্পিত এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে খোদ বিজ্ঞানীদের মধ্যেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। একই সঙ্গে এটিকে খুবই ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন তারা।

আর্থিক ব্যয় অন্যান্য ঝুঁকির কথা বাদ দিয়ে এই প্রকল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও নতুন করে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি করতে হলে পৃথিবীর অনেক দেশকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাছাড়া এর ফলে খরা এবং চরম আবহাওয়ার কারণে অনেক জায়গায় ফসলও বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এই প্রকল্পে চলমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নকেও খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডে লুসানের অধ্যাপক ফিলিপ থালমানের মতে, এটি খুবই ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প। এর চেয়ে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিরসনে সমস্যা সমাধানে নেওয়া প্রকল্পগুলো তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর ভূপদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড আর্চার বলেন, গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী গ্যাসগুলোর মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড অন্যতম। হাজার বছর ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়া কার্বন ডাই অক্সাইডকে এভাবে স্বল্প মেয়াদি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান করা খুবই দুরূহ একটি কাজ। এইভাবে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে পৃথিবীর জ্বালানি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ ঠিক রাখা একটি উচ্চবিলাসী প্রকল্প। ভবিষ্যত্ প্রজন্ম যদি এই ধরনের বিপুল পরিমাণ ‘জলবায়ু বিল’ দিতে অসমর্থ হয় তাহলে কী হবে সেটি ভেবে দেখা জরুরি।-সিএনএন

Post a Comment

Previous Post Next Post