বড়লেখায় পরীক্ষা কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসক

বড়লেখায় পরীক্ষা কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসক
বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার প্রায় ৩৪০৮ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের জন্য চিকিৎসা সেবায় গঠিত ৪টি মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। হঠাৎ কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পড়া পরীক্ষার্থীর জন্য জরুরী চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসক। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাঁচজন পরীক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক মেডিক্যাল টিমের কাউকে কেন্দ্র পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসক না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এদিন সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা সভার পূর্বে অনির্ধারিত আলোচনায়ও অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।

কেন্দ্র সচিব, পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ফকিরবাজার এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা উল্টে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ের ৫জন পরীক্ষার্থী আহত হন। আহতরা হচ্ছেন-পান্না রানী দাস (১৭), পল্লবী রানী দাস (১৭), ববিতা রানী দাস (১৭), প্রান্ত চন্দ্র দাস (১৮) ও পিয়ারা বেগম (১৭)।

আহত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকার লোকজন তাদের দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসলে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের নির্ধারিত মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস আক্তার ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আশীষ কুমার সরকারকে পাওয়া যায়নি।

তখন কেন্দ্র সচিব দীপক চন্দ্র দাস উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আশীষ কুমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করেন। আশীষ কুমার সরকার এ কেন্দ্রে তাঁর ডিউটি আছে এটা তিনি জানেন না বলে কেন্দ্র সচিবকে জানান। এরপর কেন্দ্র সচিব চিকিৎসকের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অবহিত করেন। এর প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ৩জন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর আহত দুই শিক্ষার্থীকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক পরে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আশীষ কুমার সরকার পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছান বলে কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে। একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য পরীক্ষা কেন্দ্রে। পরীক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য মেডিক্যাল টিমের কোন সদস্যকে পাওয়া যাচ্ছে না। সরেজমনি কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ও কেন্দ্র সচিবদের সাথে কথা বলে এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী এক কেন্দ্র সচিব বলেন, ‘অসুস্থ এক শিক্ষার্থীর জন্য মেডিক্যাল টিমের জনৈক চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেন্দ্রে না এসে তিনি মোবাইল ফোনে ওষুধের নাম বলে দেন। ওই কেন্দ্র সচিব ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘যদি এক চিকিৎসকে তাৎক্ষণিক কেন্দ্রে পাওয়া না যায় তবে কেন এই মেডিক্যাল টিম? ফোনে চিকিৎসা নেওয়ার চাইতে ১২১-এ কল দিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যায়। প্রতিদিনের পরীক্ষায় ৪-৫ জন পরীক্ষার্থীর সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে ডাক্তারের নামের একটি তালিকা দেয়া হলেও ডাক্তার পাননি তারা।

দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব দীপক চন্দ্র দাস বলেন, ‘আহত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকার লোকজন তাদের দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসলে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের নির্ধারিত মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকদের পাওয়া যায়নি। আমি তখন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আশীষ কুমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করি। আমার কেন্দ্রে তাঁর ডিউটি আছে তিনি এটা জানেন না জানিয়ে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে আসছি। এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে তিনি কেন্দ্রে আসেন। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হচ্ছেন। তাৎক্ষণিক নির্ধারিত চিকিৎসক না পাওয়ায় স্থানীয় বাজারের পল্লী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছি।

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে এমনিতেই জনবল সংকট রয়েছে। তাঁর মধ্যে মেডিক্যাল টিমে ৮জন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। তাদের এক সাথে হাসপাতালেও ডিউটি করতে হচ্ছে। কেন্দ্রে তাদের বসে থাকার সুযোগ নাই। তবে কোন চিকিৎসকের জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দেব আহত শিক্ষার্থীদের জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসক না পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকদের কেন্দ্রে থাকার কথা। কিন্তু জরুরী সময় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

Post a Comment

Previous Post Next Post