জেলা শহরের রাস্থার উপর গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড আর দোকান

জেলা শহরের রাস্থার উপর গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড আর দোকান
ইমাদ উদ দীন: কর্তৃপক্ষ উদাসীন। আর এই সুবাদেই অবৈধ দখলে জেলার বড় সড়ক গুলো দিন দিন ছোট হচ্ছে। এমন বেহাল দশায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন সড়ক পথের উপকার ভোগীরা। জেলার প্রধান সড়কগুলোর গা ঘেষেই দোকান ঘর। ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের দখলে ফুটপাত। আর সড়কের উপরেই ছোট বড় গাড়ির স্ট্যান্ড। একারণে সাবক্ষণিক লেগে থাকা যানজটে জনদূর্ভোগ। 

প্রতিনিয়ত এমন দূর্ভোগে জনগণ নাকাল হলেও নেই কোন প্রতিকার। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন বাধা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে সড়কের উপর এসকল অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড আর দোকান। এ নিয়ে দূর্ভোগগ্রস্থদের ক্ষোভ ও অভিযোগের অন্ত নেই। জেলা শহরের মত প্রতিটি উপজেলা শহর ও হাট বাজার গুলোতেও প্রতিদিনই চলাচলে এমন দূর্ভোগের দৃশ্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্য জনক কারণে রয়েছেন উদাসীন। 

জেলা ও উপজেলা শহরে চার ছয় জন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে দায়সার গোচরের দ্বায়িত্ব পালনের চেষ্ঠা অব্যাহত রাখলেও তাতে কোন কাজই হচ্ছেনা। বরং অল্প আয়তনে সড়কের উপরেই গাড়িগুলো শৃঙ্খলিত করতে গিয়ে সময় ক্ষেপন হচ্ছে। আর দীর্ঘ যানজটে পড়ে সড়কেই মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে জরুরী প্রয়োজনে শহরে আসা নানা শ্রেণী ও পেশার লোকজনের। তাছাড়া একারনে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা আর বাড়ছে দূর্ঘটনার ঝুঁকিও। অভিযোগ উঠেছে সড়কের জায়গায় যারা দোকান ঘর কিংবা গাড়ি স্ট্যান্ড করেছেন। তারা সংশ্লিষ্ট বড় কর্তাদের মাসোয়ারা দিয়েই বীরদর্পে তাদের এই অবৈধ দখল দ্বারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা এবিষয়টি দেখভাল করবেন তাদের ম্যানেজ করায় তাদের এই অবৈধ দখল দারিত্ব বেশ ভালোই চলছে। 

সরজমিন মৌলভীবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে দেখা গেল সড়কের উপরেই সিএনজি ও টমটমের অবৈধ স্ট্যান্ড। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সড়কের উপরে এমন অবৈধ স্ট্যান্ড থাকায় বাড়ছে জনদূর্ভোগ ও দূর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। আর একারণেই এখন চরম যানজটের কবলে মৌলভীবাজার শহর। জানা যায় মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগে ১০টি, চৌমুহনী ও শমসেরনগর রোডে ৫টি, কলেজ পয়েন্টে ২টি, টিসি মার্কেটে ৭টি, চাদঁনীঘাটে ৮টি, কোর্ট পয়েন্টে ২টি, বাজার টানিং পয়েন্টে ৩টি ও শহরের ছোট-বড় বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের উপর অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে ভাসমান গাড়ির স্ট্যান্ড। 

চাঁদনীঘাটে কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের বাস মিনিবাসের স্ট্যান্ড থাকায় সড়কের উপরে যাত্রী উঠা নামায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কারনে জেলা শহরে প্রবেশ পথেই যানজটের দূর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তাছাড়া ওই স্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী স্থানে রয়েছে একাধীক সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও টমটম স্ট্যান্ড। সড়কের উপরে ওই অবৈধ স্ট্যান্ড গুলোতে প্রতিনিয়ত সড়কের উপর থেকে যাত্রীরা উঠানামা করায় যানজট ও দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে।এমনকি ওই স্ট্যান্ড এলাকার ফুটপাত দিয়েও চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। মৌলভীবাজার থেকে শেরপুর, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগর,কুলাউড়া,জুড়ী ও বড়লেখা যাতায়াতের প্রধান সড়কেই অবস্থান এসব অবৈধ স্ট্যান্ড গুলোর। 

অভিযোগ রয়েছে এসব অবৈধ ও ভাসমান স্ট্যান্ডকে থেকে (ট্রাফিক বিভাগের) কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক জানান, নির্ধারিত স্থান না থাকায় সড়কেই তারা গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানামা করার কথা স্বীকার করে বলেন সড়কের পাশে গাড়ি রাখেন এজন্য ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে তারা গাড়িপ্রতি মাসে ১শ’থেকে ২শ’ টাকা দেন। মাসে প্রতিটি স্ট্যান্ড থেকে একসাথে তারা ওই টাকা আদায় করেন। চালক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন পুরো জেলায় ট্রাফিক পুলিশ মাসে আমাদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকার উপরে চাঁদা নিচ্ছেন। কোন মাসে এই নির্দিষ্ট চাঁদা দিতে বিলম্ব হলে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন সময় রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে তাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে দ্বীগুণ টাকা আদায় করেন। তারা বলেন আমাদেরকে স্থায়ী স্ট্যান্ড দিলে আমরা যেমন ভোগান্তিতে পড়তাম না তেমনি অন্যদেরও ভোগান্তির কারণও হতাম না। আর প্রতিমাসে মাসোয়ারা বাবতও ট্রাফিক যন্ত্রণায় অতিষ্ট হতাম না। তবে বিভিন্ন উপজেলার ট্রাফিক সার্জনগণ মাসিক চাঁদা আর চালক হয়রানীর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, চালকরা অবৈধ একাজকে বৈধ করতে নানা মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। এধরনের কাজে ট্রাফিক পুলিশ কখনো জড়িত নয়। জেলা শহর ছাড়া অন্য ৬টি উপজেলা শহরেরও একই অবস্থা। প্রতিটি উপজেলার প্রধান সড়ক লগোয়া হাট বাজার গুলোতে যানজট যেন তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। জেলার প্রতিটি উপজেলা শহর ও হাট বাজার গুলো ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল যানজট নিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের চরম দূর্ভোগ ও দূর্দশার কথা।
কুলাউড়া: কুলাউড়া শহরের প্রধান সড়কেই রয়েছে প্রায় ২০টি অবৈধ অটোরিকশা ও টমটমের স্ট্যান্ড। সড়কের উপর এমন অবৈধ স্টান্ডের কারণে শহরে রাত দিন তীব্র যানজটে স্থানীয়দের দূর্ভোগের অন্ত নেই।এছাড়া উপজেলা শহরের ভাটেরা,বরমচাল,ব্রাহ্মণবাজার ও রবিরবাজার সড়কের উপরে অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড ও দোকান ঘর থাকায় বাড়ছে যানজটের দূর্ভোগ।
জুড়ী: সদর উপজেলা শহরেই সড়কের উপর গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ডের সংখ্যা প্রায় ৯টি। আর কামিনীগঞ্জ বাজার,ভবানীগঞ্জ বাজার ও ফুলতলা বাজারে সড়কের উপরে অবৈধ দোকান আর গাড়ির স্ট্যান্ড প্রতিনিয়ত দূর্ভোগে ফেলছে স্থানীয় বাসিন্ধাদের।
বড়লেখা: পৌর শহরে প্রধান সড়কের উপর দোকানের পাশাপাশি অবৈধ গাড়ি স্ট্যান্ডের সংখ্যা প্রায় ১২টি। এছাড়া সড়কের উপর অবৈধ দোকান আর গাড়ির স্ট্যান্ডে যানজটে নাকাল উপজেলা শহরের শাহবাজপুর বাজার,অফিস বাজার,চাঁন্দগ্রাম বাজার,রতুলি বাজার,কাঠালতলি বাজার, দক্ষিণভাগ বাজার, আজিমগঞ্জ বাজার, দাসের বাজার ও পাখিয়ালা বাজারের স্থানীয়রা।
রাজনগর: সদর উপজেলা শহরে সড়কের উপরের অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ডের সংখ্যা প্রায় ৬টি। এছাড়া সড়কের উপর অবৈধ দোকান আর গাড়ির স্ট্যান্ডে যানজটে নাকাল উপজেলা শহরের মুন্সিবাজার, টেংরাবাজার, কালাবাজার, মোকামবাজার,তারাপাশা বাজার ও গোবিন্দবাটি বাজারের বাসিন্ধারা।
কমলগঞ্জ: কমলগঞ্জের শহরে সড়কের উপরে অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড রয়েছে শমসেরনগরে ৫টি,উপজেলা শহরে ৩টি,পৌরশহর ভানুগাছ বাজারে ৪টি ও এছাড়া সড়কের উপরে অবৈধ দোকান ও গাড়ির স্ট্যান্ডের কারণে সৃষ্ট যানজটে নাকাল আদমপুর বাজার,পতনঊষার বাজার, মুন্সিবাজার ও সমশেরনগর বাজারে যানজটে দূর্ভোগের অন্তনেই স্থানীয়দের।
শ্রীমঙ্গল: শহরের মধ্যেই সড়কের উপরেই দোকান আর অবৈধ গাড়ি স্ট্যান্ড সংখ্যা প্রায় ১০টি। সিন্ধুর খান বাজার ,সাতগাঁও বাজার, লতনা বাজার,মির্জাপুর বাজার,ভুনবীর বাজার, কলাপুর বাজার, ভৈরব বাজারে অবৈধ দোকান আর গাড়ির স্ট্যান্ডে অতিষ্ট জনগণ।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ফজলুর রহমান ফজলু বলেন স্থায়ী ভাবে গাড়ির স্ট্যান্ড না থাকায় যাত্রীবাহী গাড়িসহ ব্যক্তিমালিকাধীন প্রাইভেট গাড়ি ও মোটরবাইক সড়কের উপর রাখায় এবং দোকান ঘরের সামনের অংশ সড়কের উপর চলে আসায় পৌর শহর গুলোতে যানজটে দূর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে এ থেকে পরিত্রান পেতে সকলকে এগিয়ে আসার প্রয়োজন। এবিষয়ে মৌলভীবাজারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী উৎপল সামান্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে জানান সড়ক ও জনপথের আওতাধীন প্রধান সড়কের পাশে বা উপরে অবৈধ যে সকল দোকান কিংবা গাড়ি স্ট্যান্ড তুলে যানজটে সৃষ্টি করে জনসাধারণের চলাচলের পথে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানের পর যারা পুন:রায় স্ট্যান্ড বা দোকান ঘর বসিয়ে জনসাধারণের দূর্ভোগে ফেলছেন শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন জেলার প্রতিটি উপজেলা ও পৌর শহরে ডিবাইডার দিয়ে শহরে ওয়ান ওয়ে রোডের মাধ্যমে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি যানজট ও জনদূর্ভোগ নিরসনে সড়কের উপর সকল অবৈধ দোকান ও গাড়ি স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই অভিযানের কথা জানান।

Post a Comment

Previous Post Next Post