নিউজ ডেস্কঃ ভাদ্র মাসের ১৩ তারিখে নাকি শীতের জন্ম। সেই থেকে শুরু হয় শীত। কিন্তু আশ্বিন গেল, কার্তিক গেল, অগ্রহায়নও শেষ হল। পৌষ মাসে ভরা শীতেও দিনের বেলায় গরম অনুভব করছে মানুষ। তবে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের আমেজ ছুঁয়ে যায় নগরীর মানুষের শরীর।
ভোর রাতে পত্রঝরা বৃক্ষে কুয়াশার রূপালী ফোঁটা মনে করিয়ে দেয় শীত এলরে। শীতের ভরা মৌসুমেও শীত জেঁকে না বসলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট ও অলিগলি ছেয়ে গেছে শীতের গরম কাপড়ে। এতদিন মার্কেটের যেসব দোকানে গ্রীষ্মকালীন হালকা, নরম পোশাকের সমাহার ছিল সেসব দোকানেও এখন গরম পোশাকের হাওয়া।
সরেজমিনে নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, চকবাজার, নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাত ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে নগরীতে শীতের কামড় পুরোপুরি অনুভব না হলেও গ্রামের মানুষ ঠিকই টের পাচ্ছেন শীতের লু-হাওয়া। যারা গরম কাপড় কিনতে ভীড় জমাচ্ছেন নগরীর মার্কেটগুলোতে।
জানা গেছে, বিকেল হতে না হতেই গ্রামাঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শীতল হাওয়া। সন্ধ্যায় নামছে হালকা কুয়াশাও। ভোররাতে অনুভব হচ্ছে শীতের প্রচন্ড হাওয়া।
জহুর হকার্স মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, নগরীতে শীত পুরোপুরি না পড়লেও অনেকে আগেভাগে শীতের পোশাক কিনতে মার্কেটে ভীড় করছেন। ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই পছন্দমতো গরম কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে মার্কেটে বেশিরভাগ ক্রেতা আসছে বিভিন্ন উপজেলা থেকে।
তিনি বলেন, পৌষ ও মাঘ শীতের ভরা মৌসুম। এ সময় শীত জেকে বসবে। শীতের প্রকোপ শুরু হলে দোকানে বেচাবিক্রি বেড়ে যাবে। ক্রেতারা যাতে চাহিদামতো গরম পোশাক ক্রয় করতে পারেন তার জন্য দোকানে ছোট থেকে বড় প্রায় সব বয়সীর জন্য কাপড় রাখা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার জহুর হকার্স মার্কেটে দুই ছেলেকে নিয়ে গরম কাপড় কিনতে আসেন আনোয়ারার বাসিন্দা মো. লিয়াকত হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রামে ইতিমধ্যে শীত পড়া শুরু হয়েছে। ভোরে শীতের প্রভাব বেশি অনুভব হচ্ছে। এতে ছেলেদের কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া পুরোপুরি শীত আসতেও আর বেশি দেরি নেই। তাই মার্কেটে ঝামেলা সৃষ্টির আগেই ছেলেদের নিয়ে এসেছি গরম কাপড় কিনে দিতে। পরিবারের আরও তিন সদস্যের জন্য গরম কাপড় কিনেছেন বলে জানান তিনি।’
তিনি জানান, প্রতিবছর পুরোদমে শীত পড়ার পর হুড়মুড় করে মার্কেটগুলোতে গরম কাপড়ের দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। যে কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ দামে গরম কাপড় কিনতে বাধ্য হতে হয়। তাই এসব ঝামেলায় পড়ার আগে চাহিদামতো গরম কাপড় কিনতে এসেছি। এ সময়ে বাজারে গরম কাপড় কেনার ক্রেতা কম থাকলেও পছন্দমতো কাপড় কেনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতারাও ধৈর্য্য ধরে ক্রেতাকে সময় দিতে পারেন।
এছাড়া পুরোনো কাপড় (গাইট কাপড়) ক্রয়ের জন্য পরিচিত নগরীর আছাদগঞ্জ আমিন মার্কেট এলাকার পোস্ট অফিস গলিতে বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্রেতারা ভিড় করছে গরম কাপড় কিনতে। পুরোনো কাপড় বিক্রেতা আলী ইমাম বলেন, ‘শীত এখনও পুরোপুরি অনুভব না হলেও দূর-দূরান্ত থেকে বিক্রেতারা মার্কেটে কাপড় কিনতে ভীড় করছেন। এতে বেচাকেনা মোটামুটি জমে উঠেছে। তবে বিক্রেতাদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার খুচরা বিক্রেতা। এসব ব্যবসায়ীর বেশিরভাগই ছোটদের গরম পোশাক বেশি কিনছেন।’
ফটিকছড়ি থেকে কাপড় কিনতে আসা খুচরা বিক্রেতা ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘গ্রামে শীতপড়া শুরু হওয়ায় বিক্রেতারা বিভিন্ন বয়সীর গরম কাপড় কিনতে বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে আসছেন। সেজন্য পাইকারি বাজার থেকে গরম কাপড় কিনতে এসেছি। তবে এখন ছোটদের গরম কাপড়ই কিনছি বেশি।’
পুরনো কাপড় আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছরের চেয়ে শীতের মৌসুমে পুরোনো কাপড়ের বেচা-বিক্রি অনেক গুণ বেড়ে যায়। তাই এ মৌসুমকে টার্গেট করে আমদানিকারকরাও অধিক পরিমাণ পুরোনো কাপড় আমদানি করে মজুদ রেখেছেন তারা।